প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

প্রিয় পাঠক প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি এ বিষয় নিয়ে আপনারা অনেক ওয়েবসাইট খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু কোন ওয়েবসাইটেই আপনারা সঠিক তথ্য পাননি। আপনারা আরো খোঁজ করেছেন গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের করণীয় কি । আমরা আজকে আলোচনা করতে চলেছি প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি বিষয় নিয়ে।
প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

আমরা সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্যটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করি আপনার সকল ভুল ধারণা চলে যাবে এবং আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

মাতৃগর্ভে যখন কোন ভ্রুণের বৃদ্ধি ঘটে তখন মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। এজন্য অনেক গবেষক এবং ডাক্তার বলেছেন একজন গর্ভবতী মায়ের ভালোভাবে যত্নের প্রয়োজন পড়ে। শুধু যত্ন বলতে যে কাজ করা যাবে না সেইটা না।

শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক রকম যত্ন নিতে হয়। আর সেটি যদি আপনি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবে। চলুন দেরি না করে জেনে নিই একজন গর্ভবতী মায়ের সিজার হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের লক্ষন এবং পরবর্তীতে করণীয় কি তা।

গর্ভকালীন ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

জ্বর, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা, চোখে ঝাপসা দেখা, অতিরিক্ত বমি, শরীর ও চোখে হলুদ (জন্ডিস) হওয়া, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা, রক্তক্ষরন, প্রসাবে জ্বালা পোড়া হাত-পা বা মুখ হঠাৎ ফুলে ওঠা, নিম্নাঙ্গেইনফেকশন, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হওয়া, বাচ্চা নড়াচড়া কম হওয়া (১২ ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার), এক ঘন্টার মধ্যে ৪ বারের অধিক জরায়ুতে চাপ অনুভব হওয়া।

প্রসব পূর্ববর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

  • সারা শরীরে পানি আসা।
  • মাথা ব্যথা।
  • চোখে ঝাঁপসা দেখা।
  • খিচুনি হওয়া ।
  • রক্তপাত হওয়া।
  • পেটে ব্যথা অনুভব করা।
  • সময়ের আগে পানি ভাঙ্গা।

প্রসব কালীন ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

  • মাথা ব্যতীত বাচ্চার অন্য অঙ্গ যেমন
  • হাত,পা,নাড়ী) আগে আসা।
  • খিচুনী হওয়া ।
  • অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
  • ১২ ঘন্টার বেশী প্রসব ব্যথা থাকা।

প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি

  • অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
  • জ্বর ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া।

সিজার পরবর্তী করণীয় কি

  • ব্যান্ডেজ খোলার পর নিয়মিত গোসল করবেন এবং কাটা জায়গা পরিষ্কার রাখবেন।
  • দেড় মাস বিশ্রামে থাকবেন।
  • ৩ মাস ভারী কাজ করবেন না।
  • প্রসবের পর ১ মাস প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে দিনে ৩ বার উপুর হয়ে শোবেন।
  • দেড়মাস সহবাস নিষেধ।
  • ১ মাস পর থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা নিবেন।
  • বাইন্ডার বা বেল ব্যবহার করা প্রয়োজন নেই ।
  • সব ধরনের খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবেন, খাবার বেছে খওয়ার প্রয়োজন নাই। দেড় মাস পর ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যয়াম করবেন।

গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের করণীয় কি

  • সন্তান ধারণ করেছেন বুঝতে পারলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • নিয়মিত গর্ভকালীন পরীক্ষা করাবেন ( ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে ১ বার, ২৮-৩৬ সপ্তাহপযন্ত ২ সপ্তাহ পর পর, ৩৬ সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে ১ বার)।
  • গর্ভকালীন সুষম খাবার ও নিয়মিত বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম খুবই প্রয়োজন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ও ক্যালমিয়াম ট্যাবলেট সেবন করবেন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন প্রকার ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
  • দূরের পথে যাত্রা ও ঝুঁকিপূর্ন ভ্রমন থেকে বিরত থাকবেন।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভারী কাজ করবেন না এবং সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। যাতে ঝাঁকুনি না লাগে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন ও ঢিলে ঢালা পোশাক পরবেন।
  • মনকে চিন্তামুক্ত রাখবেন ও সদা হাসিখুসি থাকবেন।
  • বাম কাতে শোবার চেষ্টা করবেন। চিৎ হয়ে শোবেন না।
  • ৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে দুটি টিটিনাসের প্রতিষেধক টিকা (টি.টি) নিতে হবে।
  • বাচ্চাকে অবশ্যই শালদুধ খাওয়াবেন মনে রাখবেন শালদুধ বাচ্চার প্রথম টিকা। ৬ মাস বয়স পর্যন্তআপনার নবজাতক শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াবেন।
  • কুসংস্কার এড়িয়ে চলবেন।প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ১৫. প্রসবের পর ১ মাস প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে দিনে ৩ বার উপুর হয়ে শোবেন।
এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন:
ডাঃ উৎপলা মজুমদার
[এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (গাইনী ও অবস) এফএমএএস (ভারত), এফআইসিএস (ইউএসএ), এফএসিএস (ইউএসএ) ফেলোশিপ ইন ইনফার্টিলিটি (ভারত)]
প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, গাইনী ও অবস বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করেছি প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ কি এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের করণীয় কি। আশা করি আপনারা খুব সুন্দর ভাবে বুঝতে পেরেছেন। গাইনি ডাক্তার উৎপলা মজুমদার আমাদের সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে আলোচনা করেন। তাই আপনারা অবশ্যই এগুলো মেনে চলবেন। মনে রাখবেন আপনার হাতেই আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ।

আর অবশ্যই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে একজন গর্ভবতী মায়ের শায়েরী ও মানসিকভাবে যত্ন নিবেন। প্রসবকালীন সময়ে অনেক গর্ভবতী মা মৃত্যুবরণ করে থাকেন তাই আপনারা আগে থেকে সচেতন থাকবেন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদের কেউ জানার সুযোগ করে দিন। নতুন নতুন শিক্ষনীয় আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url